সিরিয়াল কিলার বললেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে একজন পুরুষের ছবি, যার হিংস্র মুখ দেখলে মনে হয় যাকে হাতের কাছে পাবে তাকেই শেষ করে দেবে এখনই। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই জানেন না, সিরিয়াল কিলার হিসেবে কুখ্যাত হয়েছেন অনেক নারীও। তাদের জীবনের কাহিনী শুনলে গা শিউরে ওঠে। এমনকি অনেকে এতই ভয়ংকর যে তাদের জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে হরর গল্প এবং সিনেমা। আসুন, আজ জানি ইতিহাস কুখ্যাত এমনই ৭ জন নারী সিরিয়াল কিলারের কথা!
১) এলিজাবেথ বাথোরি
১৬শ শতকের সময়ে এই হাঙ্গেরিয়ান কাউন্টেস (প্রচ্ছদের নারী) বেশ কুখ্যাত ছিলেন। তার হাতে ৮০ টি মেয়ে খুন হবার প্রমাণ পাওয়া গেছে, কিন্তু এই সংখ্যা ৬৫০ এর মতো হতে পারে। তিনি বাড়িতে বেশি বেতনে কাজের মেয়ের চাকরি দিয়ে কমবয়সী মেয়েদের নিয়ে আসতেন এবং খুন করতেন তাদেরকে। কেউ কেউ বলে তারা এলিজাবেথকে দেখেছে খুন হওয়া মেয়েদের মাংস চিবিয়ে খেতে, কেউ বা বলে তিনি এসব মেয়ের রক্ত পান করতেন। তার নাম হয়ে যায় “ব্লাড কাউন্টেস”।
২) বেল গানেস
নরওয়েজিয়ান-আমেরিকান নারী বেল গানেস ৪০ এর বেশি খুন করেন ২০শ শতাব্দির শুরুতে। বেশিরভাগ সময়ে তারা ছিলো তার স্বামী অথবা হবু স্বামী। ধারণা করা হয় তিনি নিজের এবং বাচ্চাদের জন্য এসব মানুষের লাইফ ইন্স্যুরেন্সের টাকা তুলে নিতে খুনগুলো করেন।
৩) অ্যামেলিয়া ডায়ার
ভিক্টোরিয়ান ইংল্যান্ডের কুখ্যাত শিশু খুনি ছিলেন অ্যামেলিয়া ডায়ার। তার ৬ টি খুনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় এবং ধারণা করা হয় খুনের সংখ্যা আসলে ২০০-৪০০ হতে পারে। যেসব নারী অবৈধ সন্তান ধারন করতেন, টাকার বিনিময়ে তাদেরকে কিছুদিন লুকিয়ে থাকার জায়গা দিতেন অ্যামেলিয়া। এর পর তারা যখন বাচ্চা রেখে চলে যেত, তখন তিনি তাদেরকে দত্তক দিয়ে দিতেন অন্যদের কাছে। দত্তক না পেলে অবহেলায় এবং অনাহারে মারা যেত সেই বাচাগুলো। একটা সময়ে অ্যামেলিয়া ডায়ার নিজেই বাচ্চাদের খুন করা শুরু করেন। ১৮৭৯ সালেবাচ্চাদের অবহেলা করার অপরাধে তাকে ছয় মাসের জেল খাটতে পাঠানো হয়। জেল থেকে বের হয় আবারো খুন করা শুরু করেন তিনি। ১৮৯৬ সালে তাকে আবারো গ্রেফতার করা হয় এবং ফাঁসি দেওয়া হয়।
৪) ডেলফিন লালরি
১৯শ শতকে লুইজিয়ানার এই নারী ছিলেন কুখ্যাত দাস-নির্যাতনকারী। আচার-আচরণ যথেষ্ট মার্জিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি আফ্রিকান দাসদের প্রতি প্রচণ্ড নিষ্ঠুর ছিলেন। তার বাড়িতে আগুন লাগার পরে উদ্ধারকাজে অনেকে ভেতরে ঢুকে যায় এবং তখন আবিষ্কৃত হয় এক টর্চার চেম্বার যেখানে পাওয়া যায় বেশ কয়েকজন মৃত দাসকে। তিনি পরে ফ্রান্সে পালিয়ে যান। ধারণা করা হয় শত শত দাসের মৃত্যুর জন্য তিনি দায়ী ছিলেন।
৫) জেন টপান
১৯০১ সালে জেন টপান স্বীকার করেন যে তিনি ৩১টি খুনের জন্য দায়ী। তিনি ছিলেন প্রশিক্ষিত একজন নার্স যিনি রোগীদের অজান্তে তাদের ওপর বিভিন্ন বিপদজনক পরীক্ষানিরীক্ষা করতেন। তিনি অবৈধভাবে রোগীদের মরফিন এবং অ্যাট্রোপিন দিয়ে তাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতেন। পরে তিনি স্বীকার করেন যে এভাবে রোগীদের মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যেতে দেখে তিনি এক ধরণের উত্তেজনা অনুভব করতেন। হাসপাতাল থেকে ছাঁটাই হয়ে যাবার পরে আসলে তিনি খুন করা শুরু করেন। বিষ প্রয়োগে প্রথমে নিজের বাড়িওয়ালাকে খুন করেন, এরপর নিজের পালক বোনকে। বোনের স্বামীকে প্রলুব্ধ করার উদ্দেশ্যে তাকেও বিষ প্রয়োগ করেন এবং তারপর তাকে সারিয়ে তোলার চেস্তা করেন। একজন বৃদ্ধ রোগীকে বিষ দেবার পর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি সব স্বীকার করেন। তাকে অপ্রকৃতিস্থ রায় দেওয়া হয় এবং মানসিক রোগের এক প্রতিষ্ঠানে তিনি বাকি জীবন কাটিয়ে দেন।
৬) জুলিয়া ফাযেকাস এবং অ্যাঞ্জেল মেকারস অফ নাজিরেভ
জুলিয়ার নেতৃত্বে একজোট হয় নাজিরেভ নামের এক হাঙ্গেরিয়ান গ্রামের নারীরা। ১৯১৪ থেকে ১৯২৯ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মানুষকে বিষ প্রয়োগে তারা হত্যা করে। এই নারীদের অনেকেরই স্বামী যুদ্ধে চলে গিয়েছিল যার ফলে তাদের সঙ্গী হিসেবে ভিনদেশী পুরুষদের গ্রহণ করতে হয়। জুলিয়া তাদেরকে উৎসাহ দেন যাতে তারা এসব পুরুষ এমনকি নিজেদের সন্তানদের খুন করে ঝামেলা চুকিয়ে ফেলতে।
৭) লিওনার্দা সানচুলি
লিওনার্দা সানচুলি ছিলেন এমন একজন ইতালিয় নারী যিনি ১৯৩৯ থেকে ১৯৪০ সালের মাঝে তিনজন নারীকে খুন করেন এবং তাদের মৃতদেহ রূপান্তরিত করে সাবান এবং টি-কেক তৈরি করেন। নিজের লেখা An Embittered Soul’s Confessions বইতে তিনি নিজের প্রথম খুনের বর্ণনা দেন। তাতে দেখা যায় তিনি মৃত নারীটির শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে সাবান তৈরি করে তা এক সেপ্টিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেন। তার জমে থাকা রক্ত দিয়ে তৈরি করেন টি কেক এবং তা পরিবেশন করেন তার অতিথি নারীদের।
No comments:
Post a Comment